‘মাহমুদা আমি মারা যাচ্ছি, তুমি আমার অসহায় বাবা-মাকে দেখে রেখো’

‘মাহমুদা আমি মারা যাচ্ছি, তুমি আমার অসহায় বাবা-মাকে দেখে রেখো’

‘মাহমুদা, আমি আর বাঁচতে পারলাম না। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি একটু পরেই নিশ্চিত মারা যাচ্ছি, তুমি আমার অসহায় বাবা মা ও দুই ভাইকে দেখে রেখো। তোমার জন্য আমি কিছুই রেখে যেতে পারলাম না। তোমার ভালবাসা, স্নেহ, মায়া-মমতা মৃত্যুর পরও আমার কাছে গচ্ছিত থাকবে।’

রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারে লাগা আগুনে মারা যাওয়ার আগে স্ত্রী মাহমুদাকে ফোন করে শেষবারের মতো এই কথা বলে গিয়েছেন জাহিদুল ইসলাম তোষার (৩২)।

তোষারের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১০ নং গোড়াই ইউনিয়নের ভানুয়াবহ গ্রামে। এখন তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ভয়াবহ আগুনে যে ২৫ জন নিহত হয়েছেন তাদের একজন হলেন জাহিদুল ইসলাম তোষার। তিনি এফআর টাওয়ারে হেরিটেজ এয়ার ওয়েজ কোম্পানিতে টিকিটিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শুক্রবার তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী হারানো স্ত্রী, ছেলে হারা বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। শুধু তোষারদের বাড়িই নয়, পুরো গ্রাম জুড়েই চলছে শোকের মাতম।

গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তারিকুল ইসলাম নয়া জানান, তোষারের বাবার নাম মো. এছাক আলী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তোষার ছিল মেজ। বাবার চাকরির সুবাদে মাগুড়া জেলা স্কুল থেকে এসএসসি, মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল খলিলুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে মির্জাপুর সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তি হন। পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় তোষার ছিল সেরাদের সেরা। তিনি বিকেএসপিতেও খেলেছেন।

অনার্সে ভর্তির পর বাবা মায়ের সংসারে অভাব মোচনের জন্য পর্যটন বিভাগে কোর্স করে হেরিটেজ এয়ার ওয়েজে চাকরি নেন তোষার। ২০১২ সাল থেকে তিনি এই কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার অফিসের ভিতরে আগুনের ঘটনার সময় তোষার তার স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। সেসময় তিনি তার মারা যাওয়ার কথা বলেন।

নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা অবস্থায় ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন তোষার। তার স্ত্রী মাহমুদা করটিয়া সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করছেন। স্বামীর চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকায় থাকতেন।

‘মাহমুদা আমি মারা যাচ্ছি, তুমি আমার অসহায় বাবা-মাকে দেখে রেখো’

স্বামীর প্রিয় লাল টি-শার্ট ও প্যান্ট হাতে নিয়ে কান্না করছেন স্ত্রী মাহমুদা। পাশে কান্না করছেন তার মা। ছবি: ইত্তেফাক

তোষারের লাশ শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে এলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আশপাশের গ্রামের শতশত লোকজন তাকে শেষবারের জন্য এক নজর দেখতে ভিড় জমায়। জানাজা শেষ গ্রামের কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে তোষারের বাবা এছাক আলী ও স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জানিয়েছেন, তোষারের লাশ বাড়িতে এলেও হেরিটেজ এয়ার ওয়েজ কোম্পানির কোন কর্মকর্তা কর্মচারী এবং মালিক পক্ষ তাদের খোঁজ খবর রাখেনি। এমনকি তাদের কোন সাহায্য সহযোগিতাও করেনি।

স্ত্রী ও পরিবারের দিকে তাকিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেন এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, পৌরসভার মেয়র মো. সাহাদত হোসেন সুমন ও মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক তোষারের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment